ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার পদ্ধতি

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো থেকে লোন পাওয়া খুবই ঝামেলার ব্যাপার। যাদের লোন প্রয়োজন তারা বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরেও লোন পায়না। কিংবা সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকে জানে না ; কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাংক লোন দেয় আবার কোন ক্ষেত্রে দেয়না, কত টাকা দেয় , কী কী কাগজপত্র বা তথ্য দেখাতে হয় ইত্যাদি। আজকে আমরা দেখব ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন কিভাবে নিতে হয় ।

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একটি বেসরকারি ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক । ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণ দিয়ে থাকে । 

যেসব ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে সেগুলো নিচের টপিক লিস্ট দেওয়া হলো । আপনি যেই বিষয়ে লোন নিতে ইচ্ছুক সেই বিষয়ের উপর ক্লিক করলে, সেই বিষয় সম্পর্কে যেখানে তথ্য দিয়েছি সেখান থেকে পড়তে পারবেন ।

আরো পড়ুন,

ইসলামী ব্যাংক ক্ষুদ্র ব্যবসায় লোন 

গ্রাম এবং মফস্বল এলাকার বেকার যুবকদের ছোট ব্যবসা করে কিংবা উদ্যোক্তা হয়ে নিজে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়ে থাক ।

ছোটখাট কৃষি ফার্ম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা কিংবা ছোট খাট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এই ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে ।

ঋণের পরিমাণ তিন লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে । যা নয় শতাংশ হারে সুদ দিয়ে এক বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে ।

HouseHold Durable Loan

নির্দিষ্ট মাসিক বেতনের মানুষদের পারিবারিক বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারিক জিনিসপত্র কেনার জন্য এই ঋণ দেওয়া হয় । এই ঋণ নিয়ে নির্দিষ্ট মাসিক বেতনের মানুষরা তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে পারবেন ।

বিভিন্ন সরকারি , বেসরকারি , আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা – কর্মচারী , স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা , বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক , কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, এনজিও এর কর্মরত, বিভিন্ন সরকারি কোয়াটারের মালিক , বিশ্ববিদ্যালয় , মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী এই ঋণ নিতে পারবেন ।

ইলে্ট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন: টিভি , ফ্রিজ । এছাড়াও মোটরসাইকেল , ফার্নিচার । কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এই লোন দেওয়া হয় থেকে ।

ঋণের পরিমাণ দুই লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে। যা নয় শতাংশ হারে সুদ দিয়ে সর্বোচ্চ চার বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

ডাক্তারদের জন্য লোন

ডাক্তারদের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। নতুন ডাক্তাররা দ্রুত স্বাবলম্বী হতে পারে, এইটাই এই ঋণ দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ।

এক্স রে, ইসিজি , আলট্রাসনোগ্রাম সহ বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি কেনা , নতুন নতুন চিকিৎসা প্রযুক্তি কেনা কিংবা নতুন চেম্বার খোলার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়।

এই ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা যা ৯ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। 

গ্রাহকের বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৭০ বছর হতে হবে তার সামাজিক মর্যাদা , সুস্বাস্থ্য এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকতে হবে।

পরিবহন লোন 

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা ইন্ডাস্ট্রির জন্য পরিবহন সমস্যা সমাধানে এই লোন দেওয়া হয়ে থাকে। পরিবহন সমস্যা সমাধান করে দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি এনে দেওয়াই এই লোনের মূল উদ্দেশ্য ।

ব্যক্তি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাদের পরিবহন ব্যবসা রয়েছে । অথবা পরিবহন সমস্যা রয়েছে যেমন বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ,ফ্যাক্টরি , ক্লিনিক বা হাসপাতাল এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবে ।

কার, মাইক্রো ,ট্রাক, ট্রাক্টর ,এক্সকাভেটর  , বিভিন্ন নৌ পরিবহন ছাড়াও বড় বড় যানবাহন এবং পরিবহন যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এই লোন দেওয়া হয়।

লোনের পরিমাণ নির্দিষ্ট নয় । কিসের জন্য লোন নেওয়া হচ্ছে তার উপর ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে। যা নয় শতাংশ সুদে ৪ থেকে ৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

ইসলামী ব্যাংক কার লোন 

বিভিন্ন কর্মকর্তা – কর্মচারী যারা কর্পোরেট অথবা সরকারি / বেসরকারি চাকরি করেন । কিংবা ব্যবসা করেন তাদের দ্রুত যাতায়াত এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাড়ি কেনার লোন দিয়ে থাকে ইসলামী ব্যাংক।

বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে । যা নয় শতাংশ হারে নতুন গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং রিকন্ডিশন গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ চার বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

ইসলামী ব্যাংক ছোট ইন্ডাস্ট্রি লোন

ছোটখাটো ইন্ডাস্ট্রিদের গড়ে তুলতে সাহায্য করার জন্য ইসলামী ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে । এই ঋণের মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়।

খাদ্য , ডেইরি ফার্ম ,ফার্নিচার, পেপার ,রিসাইক্লিং ,কেমিক্যাল, কম্পিউটার টেকনোলজি ,গার্মেন্টস ,লেদার ছাড়াও আরো অন্যান্য ছোটখাটো ইন্ডাস্ট্রির জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়।

ব্যবসার আসি শতাংশ টাকা ব্যাংক ঋণ দিবে ।যার পরিমাণ সর্বোচ্চ 15 লক্ষ টাকা । যা এক থেকে তিন বছরের মধ্যে 9 শতাংশ সুদে পরিশোধ করতে হবে।

ইসলামী ব্যাংক কৃষি উপকরণ ঋণ 

গ্রামের যুবক কৃষকদের স্বাবলম্বী করার জন্য এই দেওয়া হয়ে থাকে ।এই ঋণ গ্রহণ করে দরিদ্র কৃষকরা উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে তাদের ফসল উৎপাদন কয়েক গুণে বৃদ্ধি করে স্বাবলম্বী হতে পারে এই ঋণের মূল উদ্দেশ্য।

এই দিনের আওতায় পাওয়ার টিলার শেষ পাম্প বীজ রোপন করার এবং ফসল কাটার যন্ত্র সহ বিভিন্ন ধরনের উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে।

প্রয়োজনীয় কাজের আশি শতাংশ এর জন্য ইসলামী ব্যাংক ঋণ দিবে। যার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা, যা তিন বছরের মধ্যে নয় শতাংশ সুদে পরিশোধ করতে হবে।

ইসলামী ব্যাংক গৃহ নির্মাণ লোন 

শহর অঞ্চলে নিজের নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য ইসলামী ব্যাংক এই ঋণ দিয়ে থাকে ।নিজের বাড়ি তৈরি করে আবাসন সমস্যা সমাধান করাই এই ঋণের মূল উদ্দেশ্য।

ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য বাড়ি ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ কিংবা বাড়ির পুনঃনির্মাণ করা কিংবা বাড়ির মেরামত করার জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে । এছাড়া লিফট ইন্সটল করা ,জেনারেটর কেনা, এসি কেনা, সাবস্টেশন তৈরি করার জন্যও এই ঋণ দেওয়া হয়।

এই ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা ।যা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নিলে দশ বছর এবং ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নিলে ১৫ বছরের মধ্যে নয় শতাংশ সুদে পরিশোধ করতে হবে।

রিয়েল স্টেট ঋণ 

ব্যবসায়িক কাজের জন্য ফ্ল্যাট কিংবা এপার্টমেন্ট নির্মাণ করার জন্য ইসলামী ব্যাংক এই ঋণ দিয়ে থাকে। রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী কিংবা পরিশোধ করার সক্ষমতা আছে এমন ব্যক্তি যারা ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য তাদেরকে এই ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে।

ঋণের পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়। যা 5 থেকে 8 বছরের মধ্যে নয় শতাংশ সুদ সহ পরিশোধ করতে হবে।

ইসলামী ব্যাংক কৃষি লোন 

কৃষি ঋণ গ্রহণ করে নতুন নতুন ফসল উৎপাদন,কৃষিতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা এবং ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এই ঋণ ব্যবহার করা হয়।এই ঋণ গ্রহণ করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় মূল উদ্দেশ্য ।

পঞ্চাশ হাজার টাকা হতে শুরু করে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয় । যা ১২.৫০ শতাংশ হতে ১৩ শতাংশ সুদে পরিশোধ করতে হয়। যার সময়সীমা ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ।

নন রেসিডেন্ট উদ্যোক্তা লোন 

বাংলাদেশের ভিতরে যারা বাইরে নাগরিক রয়েছে এবং অথবা বাংলাদেশী যারা বাইরে ব্যবসা করে তাদেরকে এই লোক দেওয়া হয়ে থাকে। দেশের ভিতরে রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ানোর জন্যই মূলত এই ঋণ দেওয়া হয়।

এই দিনের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে এক বছর এবং দশ বছরের মধ্যে 13% সুদ বা ওই সময়ের সুদের হারে পরিশোধ করতে হবে।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য লোন 

নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য , বেকার নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এবং সমাজে নারীদের অর্থনৈতিক অবদান রাখার জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে।

মানুষ পরিমান সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা যা ছয় মাস এক বছর এবং পাঁচ বছরের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে । যা তের শতাংশ সুদে পরিশোধ করতে হয়।

সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহ ঋণ 

সরকারি কর্মচারীদের নিজেদের বাড়ি তৈরির জন্য ইসলামী ব্যাংক ঋণ দিয়ে  থাকে । সরকারি কর্মচারীরা নির্দিষ্ট বেতনের মধ্যে নিজেদের জন্য বাড়ি তৈরি করতে পারে । এটাই এই ঋণের মূল উদ্দেশ্য।

এই দিনের পরিমাণ কর্মচারীদের বেতন ক্যাডার উপর নির্ভর করে সর্বনিম্ন ২০ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে এখানে ৫ শতাংশ সরকারি ভর্তুকি দেওয়া হয় শতাংশ ৪ শতাংশ গ্রাহককে দিতে হবে । 

গৃহ নির্মাণের জন্য ৯০ শতাংশ ব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে। যা সর্বোচ্চ 20 বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এবং ঋণ পরিশোধ হওয়া পর্যন্ত গ্রাহকের বয়স 21 থেকে 58 বছরের মধ্যে হতে হবে ।

পল্লী গৃহ নির্মাণ লোন

গ্রামের মানুষদের টিন শেড, আধা পাকা , পাকা বাড়ি করার জন্য গ্রামের নাগরিক যাদের বয়স ২১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে এবং বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বা এনজিও তে চাকরি চাকরি করে অথবা স্কুল , কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক তাদেরকে এই ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। অথবা ছোট ব্যবসায়ী বা কৃষকদের পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের ঋণ নিয়ে থাকলে তা পরিশোধ করার রেকর্ড থাকলে তাদেরকেও এই ঋণ দেওয়া হয়।

গৃহ নির্মাণের জন্য ৬০ শতাংশ টাকা ব্যাংক ঋণ দিবে যার পরিমাণ সর্বশেষ ১০ লাখ টাকা। যা ৯ শতাংশ হারে( সময়ের সাথে কম বেশি হতে পারে ) ১০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

সোলার প্যানেল লোন 

বিদ্যুৎ ,তেল ,কয়লা , গ্যাসের উপর চাপ কমাতে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে শহর, গ্রাম কিংবা মফস্বল এলাকায় নিজেদের বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটানোর জন্য ইসলামী ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে ।

সোলার কেন ৭০% ঢাকা ব্যাংকের হিসেবে নেবে সর্বোচ্চ 3 বছরের মধ্যে ৯ শতাংশ সুদে পরিশোধ করতে হবে । এবং গ্রাহকের বয়স ২১ বছর হতে ৬৫ বছর এর মধ্যে হতে হবে।

আমার শেষ কথা 

আজকের পোস্টে আমি ইসলামী ব্যাংকের যে সকল লোন স্কিম রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি । সময়ের সাথে এসব লেনের সুদের হার কিংবা সময় কিংবা লোনের পরিমাণের কম বেশি হতে পারে ।আমি শুধু এখানে একটু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি । বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংকের শখায় যান অথবা হেল্প লাইনের ফোন করুন।

যদিও আমি এখানে অনেক সহজ করে লিখেছি । কিন্তু লোন পাওয়া এতটও সহজ নয় ।অনেক ঝামেলা হয়ে।  অনেক কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তারপর আমি একটু চেষ্টা করেছি আপনাদের সাহায্য করার জন্য ।

ধন্যবাদ

Leave a Comment