বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দিক থকে যে দেশ যত এগিয়ে সে দেশ তত উন্নত। বাংলাদেশেও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে শুরু হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং ।
মোবাইল ব্যাংকিং কী ?
Mobile Banking হচ্ছে এমন একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ইলেকট্রনিকের সাহায্যে স্বল্প খরচে অতি দ্রুত আর্থিক সেবা সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌছে দেওয়া যায় ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০৯ সালে ৯ টি বেসরকারি বাণিজ্যিক বাণিজ্যিক ব্যাংককে মােবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর অনুমতি দেয়।
কিভাবে মোবাইল ব্যাংকিং কাজ করে ?
এটি মুলত অনলাইন সেবা। যেখানেই মােবাইল নেটওয়ার্ক থাকবে সেখানেই এ সেবা পাওয়া যাবে। এ সেবার আওতায় কউ অ্যাকাউন্ট খুললেই
দেশের যেকোনো স্থান থেকেই ব্যাংকিং সুবিধাগুলাে পাবে।
এর জন্য অনুমােদিত ব্যাংকের অধীনে নির্ধারিত অ্যাপ বা এজেন্ট থেকে নিবন্ধন করতে হবে।
নিবন্ধনের পর গ্রাহকের মােবাইল নম্বরের শেষে একটি ‘চেক ডিজিট” যুক্ত করে ঐ গ্রাহকের আ্যাকাউন্ট নম্বর সরবরাহ করা হয়।যেমন: রকেট , রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশ।
কিছু ক্ষেত্রে চেক ডিজিট যুক্ত করা হয় না, গ্রাহকের ফোন নম্বর অ্যাকাউন্ট নম্বর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: বিকাশ বা নগদ ।
টাকা জমা ও তােলার সময় এ হিসাব নম্বরটি প্রয়াোজন হয়। কোনো ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই গ্রাহকগণ তাদের গোপন পিন কোড ব্যবহার করে মোবাইলে টাকা লেনদেন করতে পারে।
Mobile Banking প্রচলিত শাখা ব্যাংকিংয়ের এমন একটি বিকল্প ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে কম খরচে দ্রুততার সাথে ব্যাংকিং
সুবিধা বঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় আর্থিক সেবা পৌছে যায়।
বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সমূহ
বিকাশ
বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় Mobile Banking অপারেটর হলো বিকাশ ।
বাংলাদেশে এমন মানুষ পাওয়া যাবে না যিনি ; বিকাশ ব্যবহার করেনি বা বিকাশের নাম জানে না ।
কারন বলতে গেলে রাস্তার মোড়ে মোড়ে তাদের এজেন্ট রয়েছে । বাংলাদেশের মানুষ ব্যাপক হতে বিকাশ ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
বিকাশ ২০১১ সালে ডাচ বাংলা ব্যাংকের রকেট শুরু হওয়ার দুই মাস পর শুরু হলেও,
এখন বিকাশ রকেটের চেয়েও জনপ্রিয় ।
বিকাশ Bkash App
অথবা *247# ডায়াল করে ব্যবহার করা যায় ।
রকেট
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডাচ-বাংলা ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ মােবাইল ব্যাংকিং চালু করে। ২০১১ সালের মে মাসে ।
যখন প্রথম যাত্রা শুরু করে , তখন এর নাম ছিল Dutch Bangla Bank Mobile Banking ।
পরে এটার নাম ডাচ-বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং থেকে রকেট করা হয়।
রকেট Rocket App এর মাধ্যমে অথবা *322# ডায়াল করে ব্যবহার করা যায়।
নগদ
নগদ বাংলাদেশ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ফোন ভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবা।
এটি থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত।
নগদ বাংলাদেশ ডাক আইন সংশোধনী ২০১০ ধারা ৩(২) এর অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয় ।
যা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রণীত একটি স্বতন্ত্র আইন।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর এই ডিজিটাল আর্থিক সেবা চালু করে ।
যা ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে ।
নগদ Nagad app এর মাধ্যমে
অথবা *167# ডায়াল করে ব্যবহার করা যায়।
শিওরক্যাশ
শিওরক্যাশ রূপালী ব্যাংকের একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা । এর মাধ্যমে ব্যাংক , বিভিন্ন এনজিও, রিচার্জ করা, সেন্ড মানি, রিসিভ মানি সহ আরো অনেক কিছু করা যায় ।
Surecash App এবং *495# ডায়াল করে ব্যবহার করা যায় ।
সেলফিন
সেলফিন ইসলামী ব্যাংকের একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ।
Cellfin Mobile Banking হিসেবে ব্যবহার করার সাথে সাথে, এর সাহায্যে ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট সমূহ পরিচালনা করা যায় ।
সেলফিন থেকে সরাসরি বিকাশে টাকা পাঠানো যায় ।
Cellfin বাংলাদেশের একমাত্র মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটর , যারা ফ্রিতে ভার্চুয়াল মাস্টার কার্ড দিয়ে থাকে ।
আমার মতে সেলফিন বাংলাদেশের সেরা মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটর । কেন ?
সেটা জানতে নিচের লেখাটি পড়তে পারেন ।
উপায়
উপায় বাংলাদেশের তুলনামূলক নতুন একটি মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটর ।
২০২১ সালে উপায়ের যাত্রা শুরু হয় । অন্যান্য Mobile Banking অপারেটরের মত উপায় একই ধরনের সেবা দিয়ে থাকে ।
এটি নতুন বিধায় এখনো বেশি জনপ্রিয় হতে পারেনি ।
উপায়েরও নিজস্ব অ্যাপ রয়েছে এবং মোবাইল থেকে *268# ডায়াল করে উপায় ব্যবহার করা যায় ।
এম ক্যাশ
Mcash ইসলামী ব্যাংকের আরো একটি Mobile Banking সেবা ।
Mcash এর মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা গ্রহণ , লেনদেন করা , মোবাইল রিচার্জ, ইসলামী ব্যাংকের অন্যান্য অ্যাকাউন্টে টাকা আদান প্রদান করা সহ আরো অন্যান্য কাজকর্ম করা যায় ।
ট্রাস্ট আজিয়াটা পে ( ট্যাপ )
ট্যাপ বাংলাদেশের আরো একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ।
এটি ট্রাস্ট ব্যাংকের সাথে কাজ করে ।
অন্যান্য Mobile Banking এর মতো। তবে তেমন একটা জনপ্রিয় না ।
অ্যাপের মাধ্যমে অথবা *733# ডায়াল করে ব্যবহার করা যায়।
ওকে ওয়ালেট
Ok Wallet ওয়ান ব্যাংকের একটি মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা ।
এখানে অন্যান্য Mobile Banking এর মত সকল সুবিধাই আছে । তবে বাংলাদেশে তেমন একটা জনপ্রিয় না ।
টেলিক্যাশ
Telecash বাংলাদেশের একটি Mobile Banking সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।
খুব একটা জনপ্রিয় নয় । তাই আর বেশি
বিস্তারিত কিছু লিখলাম না ।
আমার শেষ কথা
উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মােবাইল ব্যাংকিং অন্যতম ভূমিকা রাখবে।
প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে Mobile Banking ব্যবস্থার সুযোেগ-সুবিধা গ্রহণ করে
বাংলাদেশের জনগণ তাদের জীবনযাত্রায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারবে এ প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
আশা করি এই পোস্ট থেকে একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন ।
আপনি চাইলে আমাকে ব্লগের অন্যান্য লেখা গুলো পড়তে পারেন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন
মোবাইল ব্যাংকিং কি
মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে এমন একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ইলেকট্রনিকের সাহায্যে স্বল্প খরচে অতি দ্রুত আর্থিক সেবা ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌছে দেওয়া যায় ।
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং কয়টি
বাংলাদেশে বর্তমানে সরকার অনুমোদিত ১৫টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা
সহজে যে কোন সময় টাকা পাঠানো, টাকা রিচার্জ করা , এজেন্ট বা এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন, বিল পরিশোধ করা , কোন কিছু কিনলে সেখানে পেমেন্ট করা সহ আরো অনেক ।
মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরের নাম
বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়, শিওরক্যাশ , সেলফিন , এম ক্যাশ,ট্রাস্ট আজিয়াটা পে ( ট্যাপ ), ওকে ওয়ালেট সহ আরো কিছু ।