ইন্টারনেটের গতি নিয়ে আমাদের সবার ত্যক্ত অভিজ্ঞতা আছে। যারা গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আমার এই ব্লগ পড়ছেন। তারা অবশ্যই দ্রুত গতির ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । Elon Musk এর স্টারলিংক ( Starlink ) ইন্টারনেট প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য পৃথিবীর সকল জায়গায় উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করা । পৃথিবীর বাইরে ছোট ছোট অনেক স্যাটেলাইট পাঠিয়ে সেটার মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হবে । বর্তমানে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হলেও। Elon Musk এর মতে এটাই ইন্টারনেটের ভবিষ্যত। থিওরিটিক্যালি স্যাটেলাইট, সাবমেরিন ক্যাবলের চেয়ে বেশি সময় নেওয়ার কথা । কিন্তু সেটাকে Elon Musk অনেক কমিয়ে আনবেন বলে জানিয়েছেন। চলুন বিস্তারিত ভাবে জানি স্টারলিংক ( Starlink ) ইন্টারনেট সম্পর্কে। নিচের টপিক লিস্ট থেকে আপনার পছন্দের টপিকে চলে যেতে পারেন।
স্টারলিংক ( Starlink ) কী
স্টারলিংক হলো জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের একটা প্রজেক্টের নাম। যা SpaceX নামক কোম্পানির দ্বারা শুরু হয়েছে । এখন পর্যন্ত ৩৩ টি দেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। এবং সারা পৃথিবীতে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। SpaceX ২০১৯ সাল থেকে স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা শুরু করেছে। ২০২১ সালের মে মাসে পর্যন্ত প্রায় ২৪০০ টি ছোট ছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে । যা পৃথিবীতে অবস্থিত অ্যান্টেনার মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করে।
কিভাবে স্টারলিংক ( Starlink ) কাজ করে
স্টারলিংক এর কাজ করার পদ্ধতি অনেক চমকপ্রদ। স্টারলিংক মূলত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করে। আমাদের পৃথিবীর বাইরে অনেক গুলো জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়। পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে 35,786 কিলোমিটার বা 22,236 মাইল দূরের পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থিত স্যাটেলাইটের জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট বলে। এই স্যাটেলাইট গুলোর মূলত টেলিভিশন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ফোন ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয় । অনেক গুলো ছোট ছোট জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট আমাদের পৃথিবীতে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে। পৃথিবীর কোন এক স্থান থেকে অন্য কোন স্থানের কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে হলে, প্রথমে আমাদের কম্পিউটার থেকে রিকুয়েস্ট আমাদের কাছের স্যাটেলাইটে যাবে। তারপর সেই রিকুয়েস্ট সেলুলার নেটওয়ার্কের মতো একটা থেকে আরেকটা স্যাটেলাইট হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাবে। তারপর কাঙ্খিত তথ্য নিয়ে একই পদ্ধতিতে ফিরে আসবে । এভাবে পৃথিবীর যে কোন স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যাবে । এমনকি অ্যামাজন জঙ্গলেও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যাবে । যায় ফলে পুরো পৃথিবীতে উচ্চ গতির ইন্টারনেটের আওতায় আসবে।
আরও পড়ুন, ব্লকচেইন কী? কীভাবে ব্লকচেইন কাজ করে?
কিভাবে স্টারলিংক ( Starlink ) ইন্টারনেট এর সূচনা হলো
স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের শুরু হয়েছে অনেক আগে। ১৯৮০ এর মাঝামাঝি সময়ে প্রথম শুরু হয় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট । প্রায় ১০০ টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে । তারপর অনেকে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দেওয়া শুরু করেছে।দিন যতই যাচ্ছে , অন্যান্য প্রযুক্তির মতো এই প্রযুক্তিও উন্নত হচ্ছে । ২০০৪ সালের জুনে শুরু হওয়া SpaceX স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০০৮ এসে EADS Astrium নামক অন্য কোম্পানির কাছে সেট প্রজেক্ট বিক্রি করে দেয়। তারপর অনেক কিছু হয়েছে। যা জানা অতোটা জরুরি না । তারপর ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে স্টারলিংক আত্ম প্রকাশ করে । স্টারলিংক তিনটি স্তরে মহাকাশে স্যাটেলাইট প্রেরণ করে।
- প্রথমে ১৪৪০ টি স্যাটেলাইট পাঠাবে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে।
- তারপরে ২৮২৫ টি স্যাটেলাইট পাঠাবে ১১১০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে।
- এবং সর্বশেষে ৭৫০০ টি স্যাটেলাইট পাঠাবে ৩৪০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে।
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে এলন মাস্ক স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহার করে একটা টুইট করেন।
কিভাবে স্টারলিংক ( Starlink ) ইন্টারনেট কানেকশন নেওয়া যায়
এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৩ টি দেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। স্টারলিংক ইন্টারনেট কানেকশন নিতে হলে টিভির ডিশ অ্যান্টেনার মতো একটা অ্যান্টেনা লাগাতে হবে। যা স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এবং ওই অ্যান্টেনা থেকে একটা ক্যাবল আমাদের রাউটারে লাগিয়ে ইন্টারনেট উপভোগ করা যাবে। মাত্র ৩৩ টি দেশের মধ্যে সেবা দিলেও স্টারলিংক এর ব্যবহারকারী দিন দিন বেড়েই চলছে।
২০২১ ও ২০২২ সালের কিছু মাসের ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিচে দেওয়া হলো,
মাস | ব্যবহারকারীর সংখ্যা |
ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১০,০০০ |
জুন ২০২১ | ১০০,০০০ |
মার্চ ২০২২ | ২৫০,০০০ |
মে ২০২২ | ৪০০,০০০ |
স্টারলিংক ( Starlink ) ইন্টারনেট এর খরচ
স্টারলিংক ইন্টারনেট এর খরচ তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি। মাসে ৪৯৯ ডলার। দাম বেশি হওয়ায় কারন অনেক উচ্চ গতির ইন্টারনেট প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৮০ থেকে ১৫০ মেগাবিট । কিন্তু যতই দিন যাবে ব্যবহারকারী বাড়বে এবং এক পর্যায়ে দাম অবশ্যই কমবে ।
সুবিধা
স্টারলিংক ইন্টারনেট এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো অনেক উচ্চ গতির ইন্টারনেট এবং তারবিহীন । তারবিহীন, তাই কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ইন্টারনেটে বিঘ্ন ঘটায় সম্ভবনা খুবই কম । সাবমেরিন ক্যাবল, ইন্টারনেট তার ছিঁড়ে গিয়ে বিঘ্ন ঘটায় সম্ভবনা থাকলেও স্টারলিংকে সেই সম্ভবনা নেই ।
আরও পড়ুন, কিভাবে বিটকয়েন কিনতে হয়
অসুবিধা
স্টারলিংক এর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো latency। ব্যবহারকারীর কম্পিউটার থেকে স্যাটেলাইট হয়ে সার্ভার গিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসতে প্রায় ৫০০ মিলিসেকেন্ড সময় লেগে যায়। কিন্তু দিন দিন এই সময় কমে যাচ্ছে । এলন মাস্ক মনে করেন এই সময় ২০ মিলিসেকেন্ডে নামিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও আবহাওয়া খারাপ হলে ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে । আর একটা সমস্যা হলো দাম। আশা করা যায় সময়ের সাথে এই দামও কমে যাবে ।
আর স্টারলিংক প্রজেক্টের জন্য অনেক পরিমাণে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে । যার ফলে মহাকাশের বর্জ্য পদার্থ বেড়ে যাবে। বর্তমানে মহাকাশে অনেক বর্জ্য রয়েছে। মহাকাশের বর্জ্য পদার্থ বেশি হলে ভবিষ্যতে মহাকাশযান সমস্যার সম্মুখীন হবে ।
Conclusion
বর্তমানে আমরা সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করি । কিন্তু সকল প্রযুক্তি সবসময় থাকে না। প্রতি নিয়ত সবকিছুর পরিবর্তন হয়ে চলেছে । আমাদের ইন্টারনেটেরও পরিবর্তন হবে ।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ভবিষ্যতে দেখা যাবে কি হয়। আপনি কি মনে করেন?
কমেন্টে জানান। আজ এটুকুই থাক।