প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ ।

ইংরেজি রিপোর্ট শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলো প্রতিবেদন । তবে বর্তমানে ইংরেজি শব্দটির চেয়ে প্রতিবেদন শব্দটি অর্থ আরও ব্যাপক ।

প্রতিবেদন দ্বারা কোন ঘটনার অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষণমূলক বিবৃতিতে বুঝায় । প্রতিবেদন হলো কোন ঘটনা, অনুষ্ঠান কিংবা কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পাঠক কিংবা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপনযোগ্য এবং যথা নিয়মে লিখিত বিবরণ । তাই তথ্য ঘটনা, কিংবা কোন সমস্যা সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি সমাধানের ইঙ্গিত প্রদান ও প্রতিবেদন রচনা লক্ষ্য প্রতিবেদন রচনাকারীকে বলা হয় প্রতিবেদক ।

আমাদের বিভিন্ন কাজে প্রতিবেদন লিখতে হয় । ছোট থেকে বড় স্কুল থেকে চাকরি জীবন সবসময়ই প্রতিবেদন লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল বা দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হয় । প্রতিবেদন লেখার জন্য বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন । আজকে আমরা প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে কিছু তথ্য জানবো ।

আরো পড়ুন, 

প্রতিবেদন রচনার বৈশিষ্ট্য

অন্যান্য লেখার থেকে প্রতিবেদন রচনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পার্থক্য রয়েছে   । সেটি হল প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত আবেগ ও পক্ষপাত পরিহার করা । সঠিক এবং বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহ করে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা । 

প্রতিবেদন লেখার কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:

পরিকল্পনা 

প্রতিবেদন লেখার আগে প্রতিবেদককে ঠিক করতে হবে কোন ধরনের প্রতিবেদন তৈরি হবে এবং কিভাবে লেখা হবে । প্রথমে মূল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে উপস্থাপন করতে হবে । তারপর অন্যান্য তথ্য উপস্থাপন করতে হবে । 

নিরপেক্ষতা 

প্রতিবেদককে নিরপেক্ষ ভাবে সব পক্ষের মতামত তুলে ধরতে হবে । যদি কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করা হয় । তাহলে তার বক্তব্য ও উপস্থাপন করা প্রয়োজন।

পর্যাপ্ত তথ্য

কখন কোথায় কিভাবে কেন ঘটনা ঘটেছে অথবা কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে সকল তথ্য প্রতিবেদনে থাকতে হবে । অর্থাৎ প্রতিবেদন পর্যাপ্ত তথ্য সম্পন্ন হতে হবে ।

ভাষা

প্রতিবেদন অবশ্যই সহজ সরল এবং সাবলীল ভাষায় লিখতে হবে । অস্পষ্ট , দ্ব্যার্থবোধক অথবা দুর্বোধ্য শব্দ প্রতিবেদনে লেখা উচিত নয় ।

অনুচ্ছেদ বিভাগ

আমার এই নিবন্ধটি যেমন আমি বিভিন্ন অনুচ্ছেদ আকারে ভাগ ভাগ করে লিখেছি । তেমনি প্রতিবেদনও বিভিন্ন অনুচ্ছেদে ভাগ ভাগ করে লিখতে হয় ।

সূত্র উল্লেখ করা 

প্রতিবেদনের মধ্যে সর্বজনগৃহীত এবং শিক্ষিত সূত্র উল্লেখ করে উপস্থাপন করতে হয় । এবং সূত্রের সোর্স সহ লিখতে হয়। 

এই কয়েকটি ছাড়াও প্রতিবেদনের আরো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে । তবে এই কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম । প্রতিবেদন অবশ্যই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এবং শ্রুতি মধুর হতে হবে। 

প্রতিবেদনের প্রকারভেদ

প্রতিবেদন বিষয় অনুসারে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন সংবাদ প্রতিবেদন তদন্ত প্রতিবেদন বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন দাপ্তরিক প্রতিবেদন কারিগরি প্রতিবেদন ইত্যাদি কিন্তু প্রতিবেদন সার্বিক বিচারে প্রধানত দুই প্রকার । 

  1. সংবাদ প্রতিবেদন
  1. প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন

প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লিখে থাকে । প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন বিভিন্ন ধরনের হয় । 

সংবাদ প্রতিবেদন

কিন্তু সংবাদ প্রতিবেদন সাধারণত বিভিন্ন সংবাদ সংবাদপত্রে । অথবা কোন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশের জন্য লেখা হয়ে থাকে । সাধারণত কোন পত্রিকার সাংবাদিক, অর্থাৎ নিজস্ব সংবাদদাতা , নিজস্ব প্রতিবেদক, স্টাফ রিপোর্টার, জেলা বা থানা প্রতিনিধি সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য এসব প্রতিবেদন রচনা করেন ।

সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

একটি সুন্দর এবং পঠিত সংবাদ প্রতিবেদন লেখার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা প্রয়োজন । সেগুলো হলো: 

  1. একটি সারাংশ মুলক এবং আকর্ষণীয় শিরোনাম দিয়ে প্রতিবেদন শুরু করতে হবে ।
  2. এরপর প্রতিবেদকের নাম স্থানের নাম ও প্রতিবেদন লেখার তারিখ উল্লেখ করে প্রথম অনুচ্ছেদটি লিখতে হবে । এবং উক্ত বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দিতে হবে ।
  3. এবারে সুনির্দিষ্ট সূত্র নির্দেশ করে ধারাবাহিকভাবে ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ লিখতে হবে ।
  4. প্রতিবেদন লেখার শেষ দিকে বিষয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্তব্য যুক্ত করা যায় ।
  5. প্রতিবেদন লেখার শেষে প্রতিবেদনের নিচে প্রতিবেদকের নাম এবং স্বাক্ষর দিতে হয় ।

সংবাদ প্রতিবেদনের আকৃতি

সংবাদ প্রতিবেদন সাধারণত সংক্ষিপ্তভাবে নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে লিখতে হয় । এর জন্য যতটুকু লেখা হয় ঠিক ততটুকু প্রতিবেদন লিখতে হয় । তবে সাধারণত ২৫০ থেকে ৩৫০ শব্দের মধ্যে লেখা উচিত ।

সংবাদ প্রতিবেদনের উদাহরণ

খানাখন্দে বেহাল আশুগঞ্জ সড়ক

থানা প্রতিনিধি, আতুতগঞ্জ, ১৮ জুলাই ২০১৮

ব্রাহ্মণবাড়য়ার আশুগঞ্জে-আড়াইসিধা-তালশহর আঞ্চলিক সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বেশ কিছু স্থানে

বড় গতের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযােগ্য হয়ে পড়েছে । বিকল্প সড়ক না থাকায় চরম ভোগান্তি সত্ত্বেও উপজেলার পাশে ইউনিয়নের লক্ষাধিক ব্যক্তিকে এ সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে । সড়ক সংস্কারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এলজিইডি গাফিলতি করছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন । 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশুগঞ্জ – আড়াইসিধা – তালশহর আঞ্চলিক শহরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ কিলোমিটার । উপজেলার দক্ষিণ এলাকার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী আশুগঞ্জ বন্দর, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জেলা সদরের যোগাযোগের একমাত্র সড়কে এটি । সড়কের উভয় পাশে কমপক্ষে লক্ষাধিক চাতাল থাকায় এগুলোর মালপত্র এসব দিয়ে পরিবহন করা হয় । দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কটির আলমনগর, আড়াইসিধা, ভবানীপুর এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে ইট – সুরকি উঠে গিয়ে বড় গর্তে সৃষ্টি হয়েছে । এতে সামান্য বৃষ্টিতেই গর্তে হাঁটু পানি জমে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে ।

স্থানীয় শহীদ ফিরোজ সরকারি কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, অবস্থার মধ্যেই যাতায়াত করতে হচ্ছে । শুকনো মৌসুমে ধুলোবালিতে এবং বর্ষায় জল কাদায় নাকাল হতে হচ্ছে পথচারীদের । অনেক সময় রিক্সা সিএনজি চালিতঅটোরিক্সা করে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা । 

এদিকে রাস্তা-সংস্কারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় দর্পণসহ অন্য সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে । ৫ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা মূল্যে সড়কটি সংস্কারের কার্যাদেশ পায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান । চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছর এর ২৩ জন সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করে মার্চ ২০২০ এর মধ্যে শেষ করার কথা । অথচ এখনো সংস্কার কাজ শুরুই হয়নি । একে এলজিইডি বিভাগের উদাসীনতা বলে এলাকাবাসী উল্লেখ করেন । 

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলসিডি কর্তৃপক্ষের দাবি বর্ষাকালে বৃষ্টির মধ্যে সংস্কার কাজ করা হলে তা স্থায়ী হয় না । তাই কিছুদিন দেরি হচ্ছে । আবহাওয়া একটু শুষ্ক হলেই কাজ শুরু হবে ।

শেষ কথা

আজকে আমরা প্রতিবেদন লেখার নিয়ম এবং একটা সংবাদ প্রতিবেদন এর উদাহরণ দেখেছি । আশাকরি আপনি বুঝেছেন । কোন প্রকার সমস্যা থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন ।

Leave a Comment